সজল চক্রবর্তী

লাল মাটি


রুক্ষ লাল মাটি, গাড়ির চাকায় ধোঁয়াশার আবির্ভাব
ছেলেটির চুল, জামা, আর খড়ি ফোটা কালো শরীরে লালের আভা।
উবু হয়ে বসে, সামনে ধামা রাখে ছেলেটা
গায়ে ইস্কুলের পোশাক
“লিবেন নাকি সীতা ফল, সীতার চুল? লিন না! তুমাদের বিটা বিটিকে
তেলের সানথে মাখাইবেন হাড় শক্ত হবে”।
সারাদিনের আয় মাত্র দশ টাকা।
সকালে শাল পাতা কুড়িয়েছে মায়ের সাথে, সন্ধ্যায় বিড়ি বাঁধবে ছেলেটা।
তার ফাঁকে বাপ মরা ছোট ভাইকে আদর করবে,
ভাইয়ের যে পেট বড়ো হচ্ছে আর মাথাও পাল্লা দিয়েছে তার সাথে।
পাঁজরের প্রতিটা হাড় যেন বালিয়াড়ির মতো উজ্জ্বল। হাড্ডিসার,
অপুষ্টি, রক্তাল্পতা, যেন তাদের বিস্তারের চরম পর্যায়ে।
ভাইকে ভালবাসে ছেলেটা, ডাক্তার-ওষুধ-পথ্য জোগাড় করে,
তাই ইস্কুল পালিয়ে সীতা ফল, সীতার চুল বেচে ছেলেটা।

আমরা সব বিজ্ঞান মনস্ক, শৌখিন পর্যবেক্ষকের দল
আমরা তাকাই শুধু করুনা ভরে, ছেলেটার দিকে
উদ্বেগ করি তার ভবিষ্যৎ নিয়ে, সাথে হাহুতাশ।
“আহা এই বয়সে ছেলেটার পরিবারের উপর টান দেখেছ?”
তবু আমাদের শোভা পায় না তার আয় বাড়ানোর
তবু আমাদের শোভা পায় না তার পাশে দাঁড়ানোর
তবু আমাদের শোভা পায় না রোগগ্রস্থ শিশুটির যন্ত্রণা লাঘব করতে
কারন আমরা যে সব তথাকথিত বিজ্ঞান মনস্ক, শৌখিন পর্যবেক্ষক।

পাহাড়ের কোল থেকে যত সমতলের দিকে এগিয়েছি
ঝাপসা হয়েছে লাল মাটি, কাদালেপা দেওয়াল, শাল বন আর ছেলেটার স্মৃতি।
যখন এপার্টমেন্টে উপস্থিত হয়েছি তখন
সাওয়ারের জলে ধুয়ে পরিস্কার করেছি চুলে, মুখে, পোষাকে লেগে থাকা লালমাটি
আর সেই ছেলেটার স্মৃতি...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন