দৃশ্যপট

- অর্ণব দাস


দৃশ্য এক

ঠিক সময়ে ঘ্যাঁচ করে ডিস্ক ব্রেকদুটো একসাথে মেরেছে শুভ্র। ‘বাপরে! খুব জোর বেঁচে গিয়েছি। নচ্ছার কালো বিড়ালটা আর রাস্তা পার হবার টাইম পেল না? যত্তসব, এখন থাক দাঁড়িয়ে।’ ভাবতে ভাবতেই নিজের বুকের ধুকপুকানি শুনতে পেল শুভ্র।

দৃশ্য দুই

খোশমেজাজে লরি চালাচ্ছিলেন বছর চল্লিশের খালেক মিঞা। রাস্তায় খুব একটা ভিড় নেই। চালাতে চালাতেই ভাবছিলেন মা মরা মেয়েটার কথা। আর চারদিন পড়েই ঈদ। ওভারটাইম করে কিছু টাকা জমেছে। এবার ঈদে মেয়েটাকে একটা ভালো সালোয়ার কিনে দেবেন। মণ্ডলের দোকানে ভারি সুন্দর একটা সবুজ আনারকলি পছন্দ হয়েছে তাঁর। হঠাৎ সামনের বাইকটা ব্রেক মেরে দাঁড়িয়ে গেল। টাল সামলাতে পারলেন না মিঞা। হুড়মুড় করে লরির সামনের চাকাটা বাইকটার ওপর উঠে গেল।

দৃশ্য তিন

নিউজ চ্যানেল গুলো আনমনেই ঘুরিয়ে যাচ্ছিলেন রঞ্জনবাবু। রিটায়ারমেন্টের পর এছাড়া আর কাজ খুঁজে পান না। হঠাৎ একটা খবরে চোখ আটকে গেল। চটকলের মোড়ে বাইক-লরি অ্যাক্সিডেন্ট। বাইক আরোহী দুর্ঘটনাস্থলেই মৃত। উন্মত্ত জনতা লরি ভাঙচুর করে ড্রাইভারকে গণধোলাই দিয়ে তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে! চারিদিকে শুধু পুলিশ আর সাংবাদিকে ছয়লাপ।

‘শালার লরি ড্রাইভারগুলো মদ খেয়ে গাড়ি চালাবে আর পথচলতি নিরীহ লোক মারবে। আর বাইকগুলোও হয়েছে তেমনি। ভিড় রাস্তায় সাঁ সাঁ করে ছুটবে। বাইক তো নয় যেন পক্ষীরাজ!’ বেজার মুখে কথাগুলো বলে চ্যানেলটা ঘুরিয়ে দিলেন তিনি।

দৃশ্য চার

ঘোষ বাবুর বাড়ীর পাঁচিলে বসে একমনে সামনের পা চেটে চেটে পরিষ্কার করছে একটা কালো বেড়াল। কাছেই কোথায় যেন খুব হল্লা হচ্ছে। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করল বেড়ালটা। তারপর আবার একমনে পা চাটতে লাগল।




বটব্যালের রহস্য


বিশু সাঁতরা পাকা চোর। গৃহস্থ যখন অকাতরে ঘুমোয় তখন বিশু নিঃশব্দে এমনভাবে কাজ সারে যে তার নিজের বাম হাতটাও জানতে পারে না ডান হাতে কি আছে। চোরমহলে তাকে এককথায় সবাই গুরুদেব মানে।

সেই বিশু এসেছে কদবেলতলা রোডের নতুন বাসিন্দার বাড়িতে চুরি করতে। কদবেলতলা এরিয়াটা বিশুর বরাবরের পছন্দ। এখানে সে আগেও কাজ করেছে। বড্ড ভদ্র ও ভিতু লোকেদের বাস এখানে। চুরিচামারি হলে কেউ থানায় যায় না। একবারই শুধু মিত্রদের ফ্ল্যাটে চুরি করার পরে তারা পুলিশ ডেকেছিল। তা এই থানার মেজবাবু এতবার থানায় ডেকে পাঠিয়েছিলেন যে শেষে তারা কেসটা বন্ধ করার জন্য ঘুষ দিতে বাধ্য হয়।
তারপর থেকে আর কোন কেসে পুলিশ এখানে আসেনি।

হপ্তা দুয়েক হল এক ব্যাঙ্কের কর্মী এখানে ভাড়া এসেছে। বিশু সব খবর রেখেছে। লোকটার নাম মধুসূদন বটব্যাল। বয়স প্রায় পঞ্চাশ মতো। কাঁচাপাকা চুল, ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, চোখে রিমলেস চশমা। দেখে বেশ শৌখিন বলেই মনে হয়। একমাত্র মেয়ে বাইরে হস্টেলে থেকে ডাক্তারি পড়ছে। তবে লোকটা একটু ভোলাভালা গোত্রের এবং বড়ই শান্ত। ইতিমধ্যে একবার বিশু রাস্তায় গায়ে পড়ে ঝগড়া করার চেষ্টা করে দেখেছে,লোকটা খুব সন্তর্পণে ঝামেলা এড়িয়ে গিয়েছে। এমনকি বিশুর দোষ থাকা সত্বেও নিজে দোষ স্বীকার করে নিয়েছে। এইসব লোকই তো আইডিয়াল খাদ্য। তার ওপর সোনায় সোহাগা হিসেবে আছে কানে শোনার মেশিন।
মালটা কানে কম শোনে, তাই সর্বক্ষণ কানে মেশিন দিয়ে ঘোরে। বেশিরভাগ লোকই ঘুমানোর সময় কানের মেশিন খুলে ঘুমোয়। এও ব্যতিক্রম হবে না।

টার্গেট সেট করার আগে বিশু রীতিমতো রিসার্চ করে। বেশ কয়েকদিন টার্গেটকে ফলো করে তার সম্পর্কে খবরাখবর জোগাড় করে বিশু। তারপর নেক্সট লেভেল। রাস্তায় গায়ে পড়ে আলাপ করে দেখে যে টার্গেট সফট না হার্ড। মনের দিক থেকে এই বটব্যালবাবুর মতো টার্গেট হল সফট। আর খুব স্মার্ট, ঠেঁটিয়া ট্যারা পাবলিক হলে হার্ড। সামান্য হার্ড টার্গেটের জন্য অন্য ব্যবস্থা, কিন্তু খুব হার্ড টার্গেট হলে সে পাবলিককে ছেড়ে দেয় বিশু। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব মালগুলোর পুলিশে ভালো চেনাশোনা থাকে। একবার এরকমই এক পাবলিকের পাল্লায় পরে জেল খাটতে হয়েছে। তবে এবারে রিস্ক ফ্যাক্টার একেবারে জিরো পার্সেন্ট। বটব্যাল যাকে বলে পুরো মাখন টার্গেট।

রাত দুটো বাজে এখন। বাড়ি থেকে সব সরঞ্জাম নিয়ে এসেছে বিশু। কদবেলতলার মোড়ের ল্যাম্পপোস্টটা দিন তিনেক হল খারাপ হয়ে জায়গাটা পুরো অন্ধকার হয়ে আছে। আরও আগে কাজটা করা যেত, কিন্তু আজকে বটব্যালের বউ গিয়েছে বাপের বাড়ি। তাই আজকেই সুবর্ণ সুযোগ। কাজটার হেব্বি সুবিধা হবে আজ। মনে মনে খুব হেসে নিল সে। তারপর রেডি হয়ে নিল।

বটব্যালের বাড়ির পেছনের দিকের দরজাটা খোলা বাঁয়ে হাতকা খেল বিশুর। দরজাটা সন্তর্পণে খুলে ঠেকিয়ে রাখল সে। তারপর ড্রয়িং রুমটা একটু ঘুরে দেখছিল। পাশের ঘরেই বটব্যালের হালকা নাক ডাকার আওয়াজ আসছে। এই নাকডাকা লোকগুলোকে বিশুর ভারি পছন্দ। কতটা ঘুমের মধ্যে আছে সেটা বোঝা যায়।

‘মালটার টেস্ট আছে বলতে হবে।’ ড্রয়িং রুমটা ঘুরে দেখতে দেখতে নিজের মনেই বলে উঠল বিশু। সুন্দর সুন্দর পেন্টিং আর শোপিসে ভর্তি। কি নেবে আর কি নেবে না সেটা মনে মনে ছকে নিচ্ছিল সে। একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল বোধহয়। এমন সময় দুবার ভয়ানক আওয়াজ হল ঘরের মধ্যে। বিশুর মনে হল বুঝি ঘরের মধ্যেই পেটো পড়ল। মাথাটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য ঘুরে গেল। ডাইনিং টেবিলে রাখা হাতটা স্লিপ কেটে গিয়ে বিশু হড়মড় করে টেবিলের ওপর পড়ে গেল। টেবিলের কোণায় লেগে কপালটা ফেটে গেল। মুহূর্তের মধ্যে বিশুর চারিদিকে অন্ধকার নেমে এল।

***

জ্ঞান ফিরতে নিজেকে এক নার্সিংহোমের বিছানায় আবিষ্কার করল বিশু। প্রথমে বুঝতে পারেনি এ কোথায় আছে। খানিক সময় লাগল বুঝতে যে হসপিটালে। তারপর তাড়াতাড়ি উঠতে গিয়েই একটা চিৎকার ছেড়ে আবার শুয়ে পড়তে হল। মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা।

রুগীকে ধড়মড় করে উঠে বসতে দেখে নার্স ছুটে এলেন। অবশ্য রুগী আবার শুয়ে পড়ল।

‘আপনার সাহস তো কম নয় দেখছি। মাথায় তিনটে সেলাই নিয়ে অমনভাবে ছটফট করছেন কেন?’

নার্সের রাগী রাগী মুখটার দিকে তাকিয়ে কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল বিশু। তিনটে সেলাই পড়েছে মাথায়! মাথায় বামপাশটায় খুব ব্যাথা। একবার হাত দিয়ে দেখবার চেষ্টা করতেই হাঁ হাঁ করে উঠল নার্স।

‘আরে আরে, করছেন কি? ওখানে ব্যান্ডেজ করা আছে, আর আপনি হাত দিতে যাচ্ছেন মানে? দেখুন অনেক সহ্য করেছি। এবার বেচাল দেখলে বেডের সাথে হাত-পা বেঁধে রেখে দেব।’

খুব ধীরভাবে বিশু বলে উঠল, ‘আমি এখানে কি করে এলাম? আমাকে কে আনল এখানে?’

‘সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আপনার মাথার একপাশ সামান্য ফেটে গিয়েছে। ক্ষত গভীর নয়, কিন্তু তিনটে সেলাই পড়েছে। আপনার বন্ধুই তো এখানে আপনাকে এনেছেন। ভাগ্য করে বন্ধু পেয়েছেন মশাই। সারারাত তিনি এখানে ছিলেন। আপনি তো ঘুমের ওষুধের জন্য সারারাত অকাতরে ঘুমিয়েছেন। কিন্তু বাইরে ঠায় জেগেছিলেন তিনি। এখন বাড়ি গিয়েছেন। এই এসে পড়বেন হয়তো। নিন তো এবার চুপ করে শুয়ে থাকুন। কথা বলবেন না একদম।’

সব কেমন যেন গোল পাকিয়ে যাচ্ছিল বিশুর। যতদূর মনে পড়ছে সে তো রাত্রে বটব্যালের বাড়িতে চুরি করতে গিয়েছিল। তারপর বোধহয় ঘরে বোম পড়ল নাকি কি ঘটল সে জানে না। অজ্ঞান হবার আগে অবশ্য কিসে একটা মাথাটা ঠুকে গিয়েছিল। নাহ, আর কিছু তো মনে পড়ছে না। কিন্তু তার কে এমন ইয়ার-দোস্ত আছে যে তাকে উদ্ধার করে এই নার্সিংহোমে আনবে? ভাবনাগুলো সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যেতে লাগল। মাথাটা আবার চিনচিন করে ব্যাথা করতে শুরু করেছে। আর ভাবতে পারল না বিশু। চোখটা বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়ল সে।

‘সনাতনবাবু, ও সনাতনবাবু। কেমন লাগছে এখন?’

কথাটা কত দূর থেকে আসছে বলে মনে হচ্ছিল। হঠাৎ চোখটা খুলেই ভয়ে পাথর হওয়ার উপক্রম হল বিশুর। সামনে টুলের ওপর বসে স্বয়ং মধুসূদন বটব্যাল! মুখে পরম মমতার হাসি। সেই হাসির দিকে তাকিয়ে আর ভয় করল না। বরং নিজের প্রতি চরম ঘৃণা জন্মাল বিশুর। ছিঃ, এই মানুষটার ক্ষতি করতে সে গিয়েছিল সে!

‘সনাতনবাবু, এখন ভালো বোধ করছেন তো?’

মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল বিশু। এমন সময় নার্স এসে হাতের চ্যানেলে ইনজেকশন দিয়ে গেল। চ্যানেলের পেছনের দিকের অংশে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আপনমনেই বটব্যাল বলে চললেন, ‘আপনার মাথাটা আমারই ডাইনিং টেবিলের কোনায় লেগে ফেটেছে। অনেক রক্ত বেরিয়েছে। ডাক্তার বলেছেন যে বেশ কিছুদিন আপনি দুর্বল থাকবেন। আমার যে কি দুশিন্তা হচ্ছিল কি আর বলব। আমি...’

এমনিতেই আত্মগ্লানিতে ভুগছিল বিশু, তার ওপর বটব্যালের এই মমতামাখানো কথাগুলো সে আর নিতে পারল না। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সে।

‘আরে আরে, সনাতনবাবু আপনি কাঁদছেন কেন? কেঁদেন না, সেলাইতে চাপ পড়বে। আপনি শান্ত হন।’

চোখ মুছে বিশু মৃদুস্বরে বলে উঠল, ‘আমার নাম সনাতন নয়। সেদিন রাস্তায় আপনাকে আসল নাম বলিনি। আমার আসল নাম বিশ্বজিৎ সাঁতরা, লোকে বিশু বলেই জানে। আমি আপনার বাড়িতে চুরি করতে গিয়েছিলাম, আর আপনি আমার জন্য এতকিছু করছেন।’

কথাটা শুনেই ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বললেন বটব্যাল। তারপর বললেন, ‘চুপ মশাই, একেবারে চুপ। ওই চুরির কথা কাউকে বলে ফেলবেন না। তাহলে খিটকেল হয়ে যাবে। আমি আপনাকে এখানে আমার বন্ধু সনাতন হাজরা বলে নিয়ে এসেছি। এখান থেকে বেরিয়ে আপনি আবার বিশু হয়ে যান তাতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু এখানে থাকাকালীন আপনি সনাতন হাজরা হিসেবে থাকুন। হাত জোর করে রিক্যুয়েস্ট করছি ভাই, আমার এটুকু কথা রাখুন।’

যত দেখছিল মানুষটাকে তত অবাক হয়ে যাচ্ছিল বিশু। মানুষ এমনও হয়। এরকম মানুষের সাথে আগে দেখা হলে সে হয়তো আজ চোর না হয়ে অন্যকিছু হতো।

কিছুক্ষণ থেমে বিশু নিজের কর্তব্য ঠিক করে ফেলল। বটব্যালের হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল, ‘দাদা আপনি আজ যা করলেন তা আমি কোনোদিন ভুলব না। আমি আপনাকে কথা দিলাম, আজ এই মুহূর্ত থেকেই চোর বিশু মৃত। এবার বিশ্বজিৎ সাঁতরা মানুষের মত বেঁচে দেখাবে। চুরি আর কোনোদিন করব না।’

বিশুর কথাগুলো শুনে বড়ই অপ্রস্তুত হয়ে যাচ্ছিলেন বটব্যাল। আরও কিছুক্ষণ সেখানে থাকার পর তিনি বাড়ির পথ ধরলেন। নার্সিংহোমের বাইরে এসে একটা সিগারেট ধরালেন তিনি। বাপরে বাপ! মাথা থেকে একটা বিরাট বোঝা নেমে গেল মনে হচ্ছে। ভাগ্যিস লোকটা কাউকে কিছু বলবে না বলল। নাহলে তাঁর মান ইজ্জতের বারোটা না না একেবারে চব্বিশটা বেজে যেত। যে টাকাগুলো গচ্চা গেল যাক, সম্মানটা তো বাঁচল।

সিগারেট টানতে টানতে সামনে এগিয়ে গেলেন মধুসূদন বটব্যাল। মুখে তার এখন শান্তির ছাপ।

কিন্তু খটকা তো একটা থেকেই গেল। কি তাই না? এই যে এত কাণ্ড ঘটল তার পেছনে কিন্তু সেই বিকট
আওয়াজ দুটো। কি সেটা? এই রহস্য ফাঁস করতে হলে একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে হবে। কখন? আরে কখন আবার। সেই রাত দুটো পনেরো।

***

রাত তখন দুটো পনেরো। বাইরে সব শুনশান। মাঝে দূর থেকে দু-একটা কুকুরের ডাক ভেসে আসছে।
কদবেলতলার নতুন ভাড়াবাড়িতে বিছানায় একা অকাতরে ঘুমোচ্ছেন আমাদের মধুসূদন বটব্যাল। পাশের টেবিলে তাঁর কানের হিয়ারিং এড খুলে রাখা আছে। রাত্রে তিনি সেটা পড়েন না। অবশ্য তার বিশেষ কারণ রয়েছে।

এমনিতে কোন অসুবিধা বটব্যালবাবুর নেই তবে এই বছর থেকেই একটা বিশেষ অসুবিধায় ভুগছেন তিনি। গ্যাসের ভীষণ প্রবলেম দেখা দিয়েছে তাঁর। কিন্তু বড়ই অদ্ভুত এই রোগটা। দিনের বেলা মাঝে মাঝে ঢেকুর ছাড়া কিছু হয় না। কিন্তু রাত্রে ঘুমোনোর পর পেটের ভেতর থেকে কেমন কেমন আওয়াজ আসতে থাকে। ঠিক মাঝরাত থেকে বিকট আওয়াজ করে তাঁর বায়ু নিঃসরণ ঘটতে থাকে। নিতম্বনির্গত সে বায়ুর গন্ধ থাকে না, কিন্তু যা জোর তার আওয়াজ তাতে যে কারোর পিলে চমকে যাবে। প্রথমবার যখন বায়ু নিঃসরণের ঘটনা ঘটে তখন তাঁর স্ত্রী ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। অনেক কষ্টে জ্ঞান ফেরে তাঁর। সেই থেকে স্বামীর সাথে এক ঘরে ঘুমোনো ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। পাশের ঘরে ঘুমোলেও কানে তুলো গুঁজে ঘুমোতে হয় তাঁকে। কারণ পাশের ঘরে থাকলেও সে আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়।

আর ঠিক এই কারণেই নিজের হিয়ারিং এড খুলে তবে রাত্রে ঘুমোন বটব্যালবাবু। নাহলে নিজের শব্দে নিজেরই ঘুম ভেঙে যায়। বাইরের কেউ জানে না এই ব্যাপারটার কথা। এই বায়ু নিঃসরণের বিকট আওয়াজের শিকার হয়েছে বিশু সাঁতরা। প্রথম শুনেছিল তো, তাই ভয় পেয়ে পড়ে গিয়েছিল। আর পড়বি তো পড় এমনভাবেই পড়ল যে বেচারার মাথাটাই ফেটে গেল।

বিশুর পড়ে যাওয়ার আওয়াজটা বেশ জোরেই হয়েছিল। তাই ঘুম ভেঙে উঠে বসেছিলেন বটব্যালবাবু। তারপর লাইট জ্বালিয়ে মেঝেতে রাস্তার সনাতনবাবুকে পড়ে থাকতে দেখে বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে সে চুরি করতেই ঢুকেছিল। কিন্তু তার থেকেও বেশি চিন্তা হয়েছিল এইটা ভেবে যে তাঁর অজান্তে তাঁরই বায়ু ওপর একজনের মাথা ফেটে যাওয়ার কারণ হয়ে গিয়েছে। তাই লোকটাকে কাছের নার্সিংহোমটায় সেই রাতেই ভর্তি করে দেন তিনি। বাকিটা তো আপনাদের সবার জানা।

একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছেন বটব্যালবাবু। পুলিশের ঝামেলা তাও সামলানো যেত, কিন্তু এই বায়ু নিঃসরণের ব্যাপারটা চারিদিকে চাউর হউয়ে গেলে কেলেঙ্কারির একশেষ হতো। তাই বায়ু নিঃসরণের এই রহস্য চেপে যাওয়াই ভাল। কি বলেন আপনারা?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন