ক্ষিদে

                        অ ত নু টি কা ই ৎ


- 'আমি তোমায় খুব ভালোবেসে ফেলেছি অরি।'

- 'বুঝতে পারি। আজ সকালে যে ছবিটা পাঠালে, অপূর্ব লাগছিল তোমায়। তোমার ওই হাসিটা পাগল করে দেয় আমায়।'

- 'ধন্যবাদ ধন্যবাদ।

শোনো কাল ওকে নিয়ে একটু বেরোবো। আমি সময় মতো ফোন করে নেবো। তুমি একদম আগে থেকে ফোন করতে যেওনা।'

- 'খুব কষ্ট হলেও না?'

- 'না। খুব কষ্ট হলেও না।

কষ্ট কি আমার হয়না ভাবো?

আমি চাইনা তার বিন্দুমাত্র সন্দেহ হোক এবিষয়ে।'

- 'যো আজ্ঞা মেরে আকা।'

অরি। অরিন্দম মুখার্জি। দারুণ স্মার্ট। সিঙ্গেল। দারুণ কথা বলে। কথা বলেইতো ভালো লেগেছিল মহুয়ার ছেলেটাকে। বয়সে যদিও মহুয়া পাঁচ বছরের বড়। কিন্তু তাতে কি! এখন এসব কোনো ব্যপার না।

মহুয়ার বিয়ে হয়েছে ১০ বছর হতে চললো।সন্তান বলতে একটা মেয়ে। ক্লাস থ্রি। অরিন্দম জানে সব। মহুয়া বলেছে।

তাদের পরিচয় সোস্যাল সাইটে। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব, সেই থেকে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা। পরিচয় মাত্র বাইস দিন অথচ এই কয়দিনেই যেন বহুদিনের চেনা।

'ডিজিটাল দুনিয়ার প্রেমগুলো তৈরি হতে যেমন সময় লাগেনা, শেষ হতেও সময় লাগেনা'- একমাত্র বান্ধবী সুকন্যা এসব বলেই বোঝায় মাঝে মাঝে সোস্যাল সাইটের প্রেম নিয়ে মহুয়ার অতি উৎসাহ, অহঙ্কার দেখে। কাজ হয়নি। মহুয়া বিশ্বাস করে প্রেম যেভাবেই হোকনা কেন সেটা কোন ফ্যাক্টর নয়, পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসে কতটা সেটাই আসল বিষয়।

সুকন্যা স্পষ্ট ভাষায় বলে - 'যেটাকে তুই দুই পক্ষের দিক থেকে ভালোবাসা বলছিস সেটা আসলে একটা মোহ ছাড়া আর কিছুইনা। কোন যুবক যদি বিবাহিত নারীর প্রেমে পড়ে তবে তার কারণ অবশ্যই দৈহিক আকর্ষণ।'

মহুয়ার'ও তো ছেলেটাকে ছবিতে দেখলেই ছুঁতে মন চায়, অস্বীকার করবে কিভাবে। একটু থেমে সুকন্যার উত্তরে মহুয়া বলে - 'ভালোবাসায় শরীর এসেই যায় একটা সময় পর কিন্তু তাই বলে তুই এটা বলতে পারিসনা যে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি দৈহিক সুখ পেতে।'

সুকন্যা চুপ হয়ে যায়। প্রসঙ্গ বদলায়।

- 'আচ্ছা বাবু রাতে যখন তোমায় আদর করি, তোমার হাবি কোথায় থাকে বলোতো? -প্রশ্ন করে অরিন্দম।

- 'হঠাৎ এই প্রশ্ন?'

- 'আরে এমনি। ফোনে কখনোই সাইড থেকেও তার কন্ঠ শুনতে পাইনাতো তাই আর কি'

- ছাড়োনা এসব কথা।

'তা যা বলেছো

ওটা আবার ধরার বিষয় নাকি! জানিতো তার ক্ষমতা।' - বলে মৃদু হাসি হাসে অরিন্দম।

মহুয়া অরিকে ভালোবাসলেও, নিজের ভাবলেও অরির মুখে বরের কথা শুনতে ভালো লাগেনা তার।

সেই দশবছর আগে তো ভালোবেসেই বিয়ে করেছিল বিভাসকে। কত সুখ দুঃখের স্মৃতি জড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে। একসাথে দিনের পর দিন কম খরচে সংসার চালানোর লড়াই।টাকা জমিয়ে একটা স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করার লড়াই।

অরিন্দমের সাথে কথপোকথনে বিভাসের প্রসঙ্গ উঠলেই একটা অপরাধ বোধ অনুভব করে মহুয়া। কতবার বারণ করেছে সে অরিকে, বিভাসের ব্যপারে কোন কথা না বলতে কিন্তু অরিন্দম বোধহয় একটা সুখ পায় বিভাসের প্রসঙ্গ তুলে আর তাই শত বারণ সত্ত্বেও ঠিক কোননা কোন ভাবে বিভাসে পৌছে যায়।

মহুয়া আর কথা বলতে পারেনা। ফোনটা কেটে ছুটে পাশের ঘরে চলে আসে।

এখানে হুইল চেয়ারে গা হেলিয়ে বসে কার্ল মার্কস পড়ে চলেছে বিভাস। চারমাস আগে ট্রেনে একটা পা ও হাত কাটা পড়েছে অসাবধানে। বিভাস বরাবরই আপনভোলা তবে তার পরিণতি এতোটা চরম হবে কেউ ভাবেনি।মহুয়া পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বিভাসকে। বিভাস 'কিছু হয়েছে'- জিঙ্গেস করতে মহুয়া বাচ্চা মেয়ের মতো ঘাড় নাড়ে।

কাল থেকে মহুয়ার ফোন সুইচ অফ। ইচ্ছে করেই সুইচ অফ করে রেখেছে সে। ফোনটা অন করতেই অরিন্দমের দুটো মেসেজ ঢুকল।

ফোনটা রেখে স্নানে যায় মহুয়া। মহুয়ার মনে হয়েছে সুকন্যার যাবতীয় কথা সঠিক আর তাই সে যা করছে সব অন্যায়, পাপ।

সাওয়ার থেকে জল ঝরে পড়ছে বৃষ্টির মতো, মহুয়ার উপোসী শরীর ভিজে যাচ্ছে। একটা শিহরণ খেলে যায়। সরে দাঁড়ায় মহুয়া। এই সময়টাতে রোজ কথা হত এই বাইসদিন অরির সাথে। কথা শুরু হলে শেষ'ই হতোনা। মহুয়াও স্নান খাওয়া ভুলে যেত। বাথরুমের এই ছোটো আয়নাটাতে নিজেকে দেখতো আর ফোনের ওপার থেকে এক কন্ঠস্বরের আদর মাখতো। মনে পড়ছে সব।

পোশাক খুলে আয়নাটার সামনে দাঁড়াতেই মহুয়া যেন শুনতে পায় অরিন্দমের কন্ঠস্বর, সেই প্রিয় কন্ঠস্বর যা মহুয়ার শরীর-মনে নেশা ধরায়। কি অদ্ভুতভাবে কথা বলে ছেলেটা! শুধু কথার মাধ্যমেই সমস্ত শরীরটাকে নিংড়ে খেয়ে ফেলতে পারে কি অনায়াসে!

মহুয়ার শরীর-মনে একটা আবেশ কাজ করছে। এক একটা কথা স্মরণে আসছে আর বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে যেন সারা দেহে।

বাথরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে মহুয়া।দাঁড়ায় খানিকক্ষণ। তারপর ফোন হাতে নিয়ে একটা নম্বর খুঁজে কলিং সুইচটা প্রেস করে।

- 'হা হ্যালো। কোথায় আছো?'

পরক্ষণেই বাথরুমের দরজা বন্ধের শব্দ হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন