নস্টালজিয়া

- প্রীতম সাহা


মৃণাল সেন মানে স্পোর্টিং পাড়ার মৃণালদাদু আজ একশোর কোঠায় পা দিয়েছে। ছোটো বড় নির্বিশেষে পাড়াপ্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন সকলেই হইচই মাতিয়ে বসেছে।দাদু আমাদের রসিকপ্রবণ হলেও মানুষ হিসেবে শান্তপ্রিয়। তাই এসব দেখে দাদুর বাঁ চোখ লাফাতে শুরু করলো। দাদু হটাৎ ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন সাথে অবাকও হলেন একে তো সে ভাবতেই পারেনি বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে সে একশো বছরের তালিকায় নাম লেখাতে পারবে আবার তার উপর সবার এরকম কাণ্ডকারখানা! এরা কি করতে চাইছে টা কী? এদের কারোর উপহার দাদুর পছন্দ হয়নি।আর উপহার তো চোখের দেখা সেগুলো তো আসলে বাড়ির সবাই ব্যবহার করবে দাদুকে দেখিয়ে।দাদুর চোখের দৃষ্টিটা আজ একটু অন্যরকম অনেকটা সেই হ-য-ব-র-লর দাড়িওয়ালা বুড়ো উদোর মতো যেন কিছু খুঁজছে। সত্যি দাদু এবার রেগে যাচ্ছে। দাদু কী চায় এরা বুঝছে না কেন? যারা একশোয় পৌঁছায় তাদের ভাষা বুঝতে অসুবিধা হয় নাকি!

মোমবাতির আলোয় কেকখানা জ্বলজ্বল করছে। কেক কাটার সময় উপস্থিত। তবুও দাদুর বিছানা ছেড়ে নট নড়নচড়ন। দাদু একদৃষ্টে চেয়ে দরজার দিকে। হটাৎ দুপদাপ শব্দে দাপাদাপি করতে করতে পাড়ার কচিকাঁচারা ঘরে এসে ঢুকলো। ব্যস,অমনি দাদুর চোখ ঝলমল করে উঠলো। পাকা চুল আর ঝুলন্ত দাঁড়িতেযেন হাওয়া বয়ে গেল। তারা একটা প্যাকেট এগিয়ে দিল দাদুর দিকে আর সমস্বরে চেঁচিয়ে বললো- "হ্যাপি বার্থডে দাদু"। দাদু কাঁপা হাতে প্যাকেটটা নিল।প্যাকেটটা খুলতেই দাদুর ফোকলা মুখ বেরিয়ে এল। দাদু ছলছল চোখে তাকালো তাদের দিকে। একজন বলে উঠলো- "দাদু এটা তোমার পছন্দ হয়নি? অনেক কষ্টে এটা যোগাড় করেছি। এইযে ফানুসের দাদা এনে দিয়েছে।" বলে আঙুল দেখালো আরেকজনের দিকে। দাদু এবার উপহারটা প্যাকেট দিয়ে বার করতেই সবাই সেটা দেখার জন্য হুড়মুড়িয়ে এগিয়ে এল। একটা বোর্ড যার একদিকে হাতে আঁকা ছবি যেখানে ছোট্ট দাদু মুখে রেফারির বাঁশি গুঁজে গাছের ডালে ঝুলছে আর অন্যদিকে সাদাকালো ছবিতে মোহনবাগানের জার্সিতে পায়ে ফুটবল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যুবক মৃণাল সেন আমাদের মৃণালদাদু।দাদুর ফোকলা মুখ আবার বেরিয়ে এল সাথে ফিনফিনে স্বরে-"থ্যাঙ্ক ইউ"।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন